বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৩ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
এবার পিতার বিরুদ্ধে কন্যার খোরপোশ আদায়ের লড়াই ও পরিণতি!

এবার পিতার বিরুদ্ধে কন্যার খোরপোশ আদায়ের লড়াই ও পরিণতি!

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক: গ্রামের পরিপাটি চেহারার এক ষোড়শী কন্যা রুণা (ছদ্মনাম)। আদালতে এসেছেন তার পিতার বিরুদ্ধে মামলা করতে। অভিযোগ খুবই গুরুতর। তাঁর বয়স যখন মাত্র ছয় বছর, তখন তাঁর বাবা রহিম আলী তাঁর মা রেণুকাকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেন। সেই থেকে রুণার আশ্রয় তাঁর মায়ের সঙ্গে নানাবাড়িতে। নানাবাড়িতে কষ্টে-সৃষ্টে অনেকটা পরগাছার মতো বেড়ে উঠেছে মেয়েটা। তাঁর মা একটা এনজিওতে কাজ করেন আর রুণা লেখাপড়া করেন। মেয়েটি এখন একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী, লেখাপড়ায় মোটামুটি ভালো। সেই নিষ্ঠুর বাবা রহিম আলী শিক্ষকতা করেন। তিনি তাঁর নতুন সংসার নিয়ে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যেই আছেন। কিন্তু তিনি কখনও রুণার খোঁজখবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন নাই। কিংবা বোঝে না কন্যার প্রতি পিতার কর্তব্যবোধ। মেয়েটি পড়াশোনার প্রয়োজনে বা অন্য কোনো জরুরি দরকারি কাজে কখনো তাঁর বাবার কাছে টাকা-পয়সা চাইতে গেলে তিনি কোণরুপ পাত্তা দেন না। মেয়েটির কষ্টের কথা শুনে কলেজের এক শিক্ষক তার অধিকার আদায়ে পিতার বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। শিক্ষকের কথামতো মেয়েটি তাঁর জন্মদাতা বাবার বিরুদ্ধে মামলা করেন। ঘটনায় চারদিকে হৈচৈ পড়ে যায়। সবাই বলাবলি করতে থাকে, বাবার বিরুদ্ধে মামলা করল মেয়ে!

১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুসারে পিতাই সন্তানের প্রকৃত অভিভাবক। তাই সন্তানের ভরণপোষণের সমস্ত দায়-দায়িত্ব হচ্ছে বাবার।
ক) সাবালক প্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত পিতা তার ছেলে-মেয়েদের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।
খ) তালাক বা বিচ্ছেদের পর সন্তান যদি মায়ের কাছে থাকে, তবুও বাবাই ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। সে ক্ষেত্রে ছেলে ৭ বৎসর এবং মেয়ের বিবাহ হওয়া পর্যন্ত। উল্লেখ্য যে, মেয়ের বিয়ের খরচও বাবাকেই দিতে হবে।
গ) যদি কোন সাবালক সন্তান অসুস্থতার জন্য কিংবা পঙ্গুত্বের জন্য রোজগার করতে না পারে, তবে বাবা তাকে আজীবন ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।
ঘ) পিতা-মাতা গরীব বা দৈহিকভাবে অসমর্থ হলে দাদার অবস্থা সচ্ছল হলে ওই সকল ছেলে-মেয়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব দাদার উপর ন্যস্ত হবে।
ঙ) সন্তানদের অভিভাবক বাবা, মা সন্তানের জিম্মাদার ও হেফাজতকারী হিসাবে ভুমিকা পালন করবে।
চ) মা সন্তানের লালন পালনকারী। মায়ের দায়িত্ব সন্তানদের দেখাশুনা করা। সন্তানেরা মায়ের কাছে থাকবে এবং বাবা সমস্ত খরচ বহন করবে।
ছ) মুসলিম আইনে বাবা তার দায়িত্ব পালন না করলে অভিভাবকত্বের দাবি করতে পারবে না। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় পার হবার পরও সন্তানেরা মায়ের কাছে থাকতে পারবে।

 

মা কখন সন্তানের জিম্মাদার থাকতে পারবে না
১. মা অসৎ জীবন যাপন করলে।
২. মা এমন কাউকে বিয়ে করলে যার সঙ্গে তার নিজের কন্যার বিয়ে হওয়ার ব্যাপারে ধর্মীয় নিষেধ নেই।
৩. সন্তানের প্রতি উদাসীন, দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে।

গার্ডিয়ান এন্ড ওয়ার্ডস এ্যাক্ট অনুযায়ী যদি কোন মা আদালতের রায় অনুযায়ী তার সন্তানদের অভিভাবকত্ব পেয়ে যান তাহলে সন্তানেরা ২১ বছর পর্যন্ত মায়ের হেফাজতে থাকলেও বাবা সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।

 

উপরের অধিকারের ভিত্তিতে মেয়েটির দায়েরকৃত মামলাটি চলতে থাকল। শুনানির তারিখে জজ সাহেব মেয়েটির বাবাকে খাসকামরায় ডেকে নিয়ে সবকিছু বুঝিয়ে আদালতের বাইরে মেয়ের সঙ্গে আপস-মীমাংসা করে নেওয়ার জন্য উপদেশ দিলেন। কিন্তু তিনি নানা টালবাহানা করতে থাকেন, মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দায়িত্ব এড়াতে চান। অগত্যা জজ সাহেব বাধ্য হয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে রহিম আলীর বিরুদ্ধে মেয়েটির ছয় বছর বয়স থেকে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত মাসিক তিন হাজার টাকা হারে বকেয়া খোরপোশ এককালীন প্রদান করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে রুণার বয়স ২১ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এভাবে খোরপোশ দেওয়ার জন্যও তাঁকে বলা হয় এবং মেয়েটির বিয়ের যাবতীয় খরচও বহন করার জন্য পিতা রহিম আলীকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ রায়টি এলাকায় ব্যাপক আলোচনায় আসে। লোকলজ্জার চাপে ও আইন-আদালতের ভয়ে শেষ পর্যন্ত রহিম আলী মেয়ের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হন। মেয়েটির পক্ষের আইনজীবী হিসেবে আমার সাথে মাঝে মধ্যে কথা হয়, তিনি ভালো আছেন বলে জানান।

 

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ও আইন গ্রন্থ প্রণেতা। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

 

 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel